বিস্তারিত

তাকদীর এবং তদবির সম্পর্কে ইসলামী আক্বীদা।

মাওলানা মুফতী আব্দুল আহাদ 12 এপ্রিল

তাকদীর এবং তদবিরের(উপায়-উপকরণ ও প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ গ্রহণ) বিষয়টা পরিস্কার না করে নিখুঁত ঈমানের দাবী করাটা বড় ভুল। তাই বিষয়টার খোলাসা হওয়া দরকার। তাই এ বিষয়ে আপনাদের সামনে সংক্ষিপ্ত আলোচনা তুলে ধরবো ইংশা আল্লাহ। #তাকদীরের বিষয়ে কোরআনের চিরন্তন বাণী: قُلْ لَنْ يُصِيبَنَا إِلَّا مَا كَتَبَ اللَّهُ لَنَا هُوَ مَوْلَانَا ۚ وَعَلَى اللَّهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُونَ বলুন, আমাদের জন্য আল্লাহ্‌ যা লিখেছেন তা ছাড়া আমাদের অন্য কিছু ঘটবে না; তিনি আমাদের অভিভাবক। আর আল্লাহ্‌র উপরই মুমিনদের নির্ভর করা উচিত। ( সুরাঃ আত- তাওবা, ৫১) অদৃষ্টের লিখনের বাহিরে কারো যে কোন কিছু করার ক্ষমতা নেই তা মানুষকে মহান আল্লাহ তাআলা পরিস্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। আর আমাদের তাকদীর কখন লেখা হয়েছিলো তার বর্ণনা রসুল সা. তাঁর ভাষায় এভাবে দিয়েছেন- হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. বলেন: আসমান জমীন সৃষ্টির ৫০ হাজার বছর পূর্বে আল্লাহ তাআলা মখালুকের তাকদীর লিখেছেন। আর তখন তাঁর আরশ ছিলো পানির উপর। (মুসলিম শরীফ) অন্য এক হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, প্রতিটি বস্তুরই হাকীকত রয়েছে। কোন বান্দাই প্রকৃত ঈমানের পর্যায়ে পৌছতে পারবে না, যতক্ষণ না এটা দৃঢ়ভাবে জানবে যে, তার যা ঘটেছে তা কখনো তাকে ছেড়ে যেতো না। আর যা তাকে ছেড়ে গেছে তা কখনো তার জন্য ঘটতো না। (মুসনাদে আহমাদ) একটি দীর্ঘ হাদীসে হযরত ইবেনে আব্বাসকে নসীহত করে রসূল সা. বলেছেন: আর জেনে রাখ, যদি উম্মতের সবাই তোমার কোন উপকার করতে একত্রিত হয়, তারা তোমার কোন উপকার করতে সমর্থ হবে না, তবে শুধু ঐটুকুই পারবে যতটুকু আল্লাহ তোমার জন্য লিখে রেখেছেন। আর তারা যদি সবাই তোমার কোন ক্ষতি করতে ইচ্ছা করে, তবে শুধু ঐটুকু করতে পারবে যা আল্লাহ তোমার উপর লিখে রেখেছেন। কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছে, আর গ্রন্থটি শুকিয়ে গেছে।(অর্থাৎ সেখানে আর রদবদল করা হবে না।) (তিরমিযী) উল্লিখিত আয়াত ও হাদীসসমূহের দিকে তাকালে মনে হয়, মানুষ পার্থিব উপায়-উপকরণ,চেষ্টা তদবীর ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করুক চাই না করুক তার তাকদীরে যা লেখা আছে তা ঘটবেই কস্মিনকালেও তা রদ করা সম্ভব না। তাই কারো মনে হতেই পারে যে, তাহলে তদবির করে লাভ কি? তাই আমাদের পরিস্কার হওয়া দরকার যে একজন ঈমানদার পার্থিব দুনিয়ায় তদবির গ্রহণ করবে কিভাবে। এ বিষয়ে হজরত ইয়াকুব আ. এর ঘটনাটা আমাদের স্মরণ রাখা দরকার। ইরশাদ হচ্ছে; وَقَالَ يَا بَنِيَّ لَا تَدْخُلُوا مِنْ بَابٍ وَاحِدٍ وَادْخُلُوا مِنْ أَبْوَابٍ مُتَفَرِّقَةٍ ۖ وَمَا أُغْنِي عَنْكُمْ مِنَ اللَّهِ مِنْ شَيْءٍ ۖ إِنِ الْحُكْمُ إِلَّا لِلَّهِ ۖ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ ۖ وَعَلَيْهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُتَوَكِّلُونَ ইয়াকুব বললেনঃ হে আমার ছেলেরা! সবাই একই প্রবেশদ্বার দিয়ে যেয়ো না, বরং পৃথক পৃথক দরজা দিয়ে প্রবেশ করো। আল্লাহর কোন বিধান থেকে আমি তোমাদেরকে রক্ষা করতে পারি না। নির্দেশ আল্লাহরই চলে। তাঁরই উপর আমি ভরসা করি এবং তাঁরই উপর ভরসা করা উচিত ভরসাকারীদের। (সূরা ইউসুফ; ৬৭) আয়াত থেকে কি পেলাম: ১। এক দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে নিষেধ করেছেন যাতে ছেলেরা কোন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। এটা নিছক তদবির মাত্র। ২। তদবিরের পর ভরসা আল্লাহর উপর হলে তদবির তকদীরের অধীনে চলে যায়। তাই তিনি বলেছিলেন: নির্দেশ একমাত্র আল্লাহরই চলে। আমিও তাঁর উপরই ভরসা করি এবং মুমিনদেরও তাই করা দরকার। বিষয়টা আরো পরিস্কার করার জন্য একটি হাদীস তুলে ধরছি। হাদিসটি মুসনাদে আহমদসহ বিভিন্ন হাদীসের কেতাবে বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত হয়েছে। হজরত আবু খেজামাহ রা. এর পিতা ই'য়ামুর রা. বলেন: ওগো আল্লাহর হাবীব আমরা যে বিভিন্ন সময় ঝাড়ফুঁক করি এবং রোগ-ব্যাধিতে ঔষধ ব্যাবহার করি এবং বিপদাপদ থেকে বাঁচার জন্য উপায়-উপকরণ গ্রহণ করি এগুলো কি তাকদীরে পরিবর্তন আনতে পারে ? রসুল সা. উত্তরে বললেন এটাও আল্লাহ তাআলার তাকদীরের অন্তরর্ভুক্ত। #উক্ত হাদীস থেকে আমরা একটা মূলনীতি গ্রহণ করতে পারি আর তা হচ্ছে মহান আল্লাহ তাআলা আমাদের যে জ্ঞান-বুদ্ধি দিয়েছেন তা দিয়ে দুনিয়ায় চলার জন্য উপায়-উপকরণ ও প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা তাকদীর বিরোধী নয় বরং এগুলোও তাকদীরের অন্তর্ভুক্ত এবং আবশ্যকরণীয়। আর এ পথ অবলম্বন করা ছাড়া মানুষের সামনে আর কোন পথ খোলা নেই। #পার্থিব জীবনে তদবিরের অবলম্বনে একজন অমুসলিম আর মুসলিমের মধ্যে পার্থক্য: এখানে এসেই বড় বড় জ্ঞানীদের মূর্খতা ধরা পড়েছে। তারা জ্ঞানের সীমানা পেরিয়ে তাদের মালিককে চিনতে অক্ষম হয়েছে। তারা তদবির তথা উপায়-উপকরণ এবং আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানকেই তাদের কাজের সফলতা ও চরম চাওয়া পাওয়া ও জীবনের শেষ ধাপ মনে করে। আর একজন মুসলিম এগুলো নিছক মাধ্যম মনে করে, আর মনে করে যে , এগুলোর উপর ভাল মন্দ নির্ভরশীল নয়। প্রকৃত ব্যাপার আল্লাহর হাতে। আমার উপর দায়িত্ব হলো সঠিক কাজটি করে যাওয়া এবং আল্লাহর উপর ভরসা করা। অতঃপর তাঁরই কাছে সার্বিক সহযোগিতা কামনা করা। তাই একদল তদবির গ্রহণের পরেও মুমিন এবং জান্নাতি আর আপর দল তদবির গ্রহণ করেও কাফির ও জাহান্নামী। বিষয়টাকে সহজে স্মরণ রাখতে পারেন এভাবে ১। আল্লাহ তাআলা অসীম ক্ষমতার মালিক। ২। আমাদের তিনি সসীম ক্ষমতা দিয়েছেন। আর এই সসীম ক্ষমতাকে রসূলের তরীকা মতে ব্যাবহার করলে তাকদীর ও তদবিরের সমন্বয় ঘটে। হে আল্লাহ! আমি বিশ্বাস করি যে তকদীরের ভালো-মন্দ তোমার হাতে

প্রসঙ্গ: প্রবন্ধ মন্তব্য: 0


আপনার মন্তব্য লিখুন


Graveter Image

নাম

April 12